এস আলমের ব্যাংক দখল : ইসলামী ব্যাংকের কর্তারাও লুটে জড়িত!
জামাত-শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে যাদের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে ছাঁটাই করতে চেয়েছিলেন, পরে তাদের অনেকেই আবার এস আলমের লুটের সহযোগী হয়ে ভাগিয়ে নেন নানাবিধ সুবিধা ও মোটা অংকের ভাগ। এই তালিকায় আছেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাগণ। এমন তথ্য উঠে এসেছে গণমাধ্যমের কাছে। তথ্য বলছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ দখলের পর পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করত একটি উদ্যোগ নিয়েছিলেন এস আলম। ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্হাপনা পরিচালক ও জামায়াত শিবিরের সক্রিয় কর্মী মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা। ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে পুরনো কর্মীদের একজন মধ্যে তিনি একজন। অনুসন্ধানে জানা যায়, মনিরুল মাওলা ছাত্রশিবির করতেন এবং বিভিন্ন সময় দায়িত্বশীল পদে গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন। তার পুরো পরিবারের সদস্যরাও জামায়াত শিবির রাজনীতির সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। ২০১৮ সালে তিনি যখন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তখন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে ছাঁটাই করতে উদ্যোগ নেন এস আলম। তবে সে যাত্রায় অদৃশ্য কৌশলে টিকে যান মনিরুল মওলা। নানা কৌশলে ও ছলছাতুরীতে হয়ে যান এস আলমের একজল বিশ্বস্ত সহযোগী।
২০২১ সালে পদোন্নতি পেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকও হন মনিরুল মওলা। তার সময়েই ইসলামী ব্যাংকে ঘটে ইসলামী ব্যাংকের ইতিহাসের ভয়ংকর নভেম্বর, রিজার্ভ কেলেংকারিসহ বহু লুটতরাজ। মনিরুল মওলা এখনো বহাল তবিয়তে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শিখা হুসনে আরা জানান, ‘কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা অপসারণ করা বা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া এবং কোনো কর্মকর্তা যদি জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ করেন তাহলে তাকে অপসারণ করার দায়িত্ব পর্ষদের উপর।’
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আলী। তিনি ১৯৯২ সালে ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক সক্রিয় এই কর্মী ২০১৮ সালে ছিলেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। এস আলমের দলে ভিড়ে সুকৌশলে অল্প সময়ে দুটি পদোন্নতি বাগিয়ে হয়ে যান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সরকার পতনের পর ইসলামী ব্যাংক এস আলমমুক্ত হলে অন্য কর্মীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু নানা কারণে শিবির কর্মী হওয়ার পরও কায়সার আলী পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেও ব্যবস্হাপনা পরিচালক মনিরুল মওলা এখনো বহাল। অথচ মনিরুল মওলার বিরুদ্ধে রয়েছে এস আলমের ঘনিষ্ঠতা ও নানা অনিয়মের অভিযোগ। একাধিক সূত্র জানায়, মনিরুল মওলার সাথে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতা থাকায় গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও পার পেয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই আবার মনিরুল মওলা বহাল থাকার পেছনে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পরিষদও জড়িত বলে দাবি করছেন।
২০১৭ সালের পাঁচ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক দখল করেন এস আলম। ব্যাংকে কর্তৃত্ব বাড়াতে পুরোনোদের সরিয়ে নিজের পছন্দের কর্মী নিয়োগ দেয়ারও প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। এজন্য, ২০১৮ সালে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইকে দিয়ে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার একটি তালিকা করেন।
অনুসন্ধানে এমন দুটি তালিকাও ওঠে এসেছে গণমাধ্যমের কাছে। যেখানে আছে এস আলম ঘনিষ্ঠ দুই শতাধিক কর্মকর্তার নাম পরিচয়। ব্যাংক পরিচালনায় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় ছাঁটাই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন এস আলম।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ‘ওই সময়ে এস আলমকে সাহায্য করেছে জামায়াতেরই অনেকগুলো চেনা লোক। তারা তাদের আদর্শের সাথে বেইমানি করেছে শুধু প্রমোশন পাওয়ার জন্য।’
গত সাত বছরে ইসলামী ব্যাংকে প্রায় দশ হাজার কর্মী নিয়োগ দেন এস আলম। জানা যায়, পুরনো এবং এস আলমের নিয়োগ দেয়া কর্মীদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তদন্ত করছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য কাজ করছে তিনটি কমিটি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, সকল সংকট কাটিয়ে ইসলামী ব্যাংক আবারও তার ঐতিহ্যে ফিরতে চেষ্টা করছে।