চট্টগ্রামে জোড়া খুনের নেপথ্যে রহস্য!
চট্টগ্রামের অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে আলোচিত প্রকাশ্যে গুলি করে দুজনকে হত্যার পেছনে রয়েছে পূর্ববিরোধ। দু’জনই স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং একে অপরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় মোহাম্মদ আনিস (৩৮) ও মাসুদ কায়সারকে (৩২)। এলাকাবাসী জানান, আনিস ও মাসুদ স্থানীয় রাজনীতিতে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ইউনুস গণি চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ও সক্রিয় ছিলেন। তাঁরা চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার পশ্চিম কুয়াইশ এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ দ্বন্দ্বের জেরেই এক পক্ষের লোক তাঁদের দুজনের ওপর গুলি চালান। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় পৃথক একটি মামলা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। নিহত মাসুদের ভাই বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন।
আনিস ও মাসুদকে যে স্থানে গুলি করা হয়, সেটি নগরের পাঁচলাইশ ওয়ার্ড ও হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা। এ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াত–সমর্থিত আলাদা আলাদা রাজনৈতিক পক্ষ সক্রিয় রয়েছে। বালু ব্যবসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট ছিল পক্ষগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে।
এদিকে পেশায় পোলট্রি ব্যবসায়ী আনিস বালুর ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তাঁর শ্বশুর মোহাম্মদ শাহজাহান। তবে বালুর ব্যবসাকে ঘিরে এ ঘটনা হয়েছে কি না, তিনি জানেন না। তবে আনিসের সঙ্গে একটি পক্ষের কয়েক মাস আগে বিরোধ হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মুহাম্মদ মহিউদ্দিন সুমন বলেন, মাসুদ কায়সার হত্যার ঘটনায় করা মামলায় চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। এর মধ্যে একজন নগরের পাঁচলাইশ থানার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুহাম্মদ সাজ্জাদ। আসামিদের মধ্যে দুজন নিহত ব্যক্তিদের একই রাজনৈতিক দলের প্রতিপক্ষের লোক।
গতকাল দুপুরে নিহত আনিস ও মাসুদের বাড়িতে দেখা যায়, দুই বাড়িতেই শোকের মাতম। দুই ছেলে, স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে নিজ বাড়িতে থাকতেন আনিস। এদিন সেখানে কথা হয় আনিসের মা সায়রা বেগম ও স্ত্রী এনি আক্তারের সঙ্গে।
তাঁরা বলেন, ‘আনিসের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না। ঘর থেকে ডেকে নিয়ে তাঁকে মেরে ফেলেছে। আমরা এই সরকারের কাছে এ হত্যার বিচার চাই।’
গতকাল শুক্রবার দুপুরে মাসুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মৃত্যুতে শোক নেমে এসেছে পুরো বাড়িতে। মাটিতে বসে কান্নায় বিলাপ করেছিলেন তাঁর খালা ইয়াসমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার বোনের ছেলেকে এভাবে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই। সে রাজনীতি করত, এটা কি অপরাধ? রাজনীতির জন্য তাঁকে মেরে ফেলতে হবে?’
স্হানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এ মৃত্যুর জন্য জামায়াত শিবিরকে দায়ী করেছেন। তারা অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপতারের দাবি জানান।