রাজশাহীর বাঘায় মাদ্রাসা পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী নিখোঁজের ৫দিন পর উদ্ধার করেছে বাঘা থানা পুলিশ। রবিবার (১৬ জুন) রাতে আড়ানী পৌরসভার তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই স্কুল ছাত্রীর পিতা বাদী হয়ে বাঘা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, গত (১১ জুন) বিকাল সাড়ে ৪টার সময় আড়ানী বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর তার পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজা খুঁজি করেও মেলেনা সন্ধান। ওই স্কুল ছাত্রী আড়ানী পৌরসভার ভারতীপাড়া এলাকার রেজাউলের মেয়ে। সে বর্তমানে আড়ানী দাখিল মাদ্রাসার ৮ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত।
মামলার এজাহার সুত্রে জানা যায়, রবিবার আনুমানিক বিকাল ৫টার সময় আড়ানী পৌরসভা ৮ নং ওয়ার্ড চকসিংগা মেডিকেল মোড় সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে থেকে অজ্ঞাত সিএনজিতে করে নিয়ে যায় সঙ্গীয় লোকজন সহ সাবেদ নামের এক যুবক। সাবেদ আলী (১৭) উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের খাগড়বাড়ীয়া গ্রামের মাহাবুর সরদারের ছেলে। মাদ্রাসা পড়ুয়া ওই ছাত্রী কে মাদ্রাসায় আসা যাওয়ার ফাঁকে নানান তাল বাহানায় দীর্ঘদিন থেকে সাবেদ প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছে। ওই ছাত্রী তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রবিবার বিকালে জোরপূর্বক সিএনজিতে করে তুলে নিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত (১৪ জুন) শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেদের চাচা জালাল উদ্দীন সহ আরও লোকজন নিয়ে আসে ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন লিটনের কার্যালয়ে। সেখানে ওই ছাত্রীর বাবা সহ অনেক লোকজনের উপস্থিতিতে জালাল উদ্দীন বলেন, যেহেতু ছেলে-মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক, আইনগত ভাবে তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি হবে না। আগে আমরা উভয়পক্ষ মিলে ছেলে মেয়েকে খুঁজে বেরকরি। তারপর সামাজিক ভাবে তাদের স্বীকৃতি দেব। পরেরদিন জালালের ছেলের শশুর পাকুড়িয়া গ্রামের সাজদারের বাড়িতে পাওয়া যায় ছেলে মেয়ে কে। সেখানে মিষ্টিভাষী জালাল মেয়ের বাবাকে সহ যেতে বলেন স্থানীয় কাউন্সিলর কে। তারা সেখানে গেলে জালাল ও তার ছোটভাই বুলবুল প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে রেজাউল কে মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় মেয়েকে রেখে সাথে থাকা লোকজন নিয়ে রেজাউল চলে এসে থানায় মামলা দায়ের করেন।
বিষয়টি বুঝতে পেরে ধুরন্ধর জালাল ১৬/০৬/২৪ বিকালে সাবেদের মামা নাসির উদ্দিন (২৮) ও মাহফুজুর রহমান (২২) নামের এক যুবকের সাথে ওই ছাত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠায়। সাবেদের চাচা জালালের কূটবুদ্ধি বিষয়ে বুঝতে পেরে
পরিবারের লোকজন তাদের আটকে রেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ এসে বাড়ির সামনের পাকা রাস্তার উপর হইতে তাদের দুইজন সহ মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে আড়ানী পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ১১ তারিখে রেজাউলের মাদ্রাসা পড়ুয়া মেয়ে নিখোঁজ হয়। পরবর্তীতে তার আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে খোজ করেও পাওয়া যায়না। পরবর্তীতে ছাবেদের চাচা জালাল আমার সাথে যোগাযোগ করে বলেন, আমাদের ছেলেও নেই আপনাদের মেয়েও নাই আমরা একসঙ্গে তাদের খুঁজে বের করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবো। যেহেতু তাদের বয়স কম তাই রাষ্ট্রিয় স্বীকৃতি দিতে না পারলেও সামাজিক স্বীকৃতি দিয়ে আমরা উভয়ই তাদের মেনে নিবো। মেয়ের বাবা সহ আরও লোকজনের উপস্থিতিতে সাবেদের চাচা এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যায়। পরের দিন ছেলে মেয়েকে পাওয়া গেছে মর্মে আমাদের ডাকে। মেয়ের বাবাকে সাথে নিয়ে আমি সেখানে উপস্থিত হই। তারা তাদের প্রতিশ্রুতি খেলাপ করে বলেন, আপনাদের মেয়েকে নিয়ে যান, আমরা ছেলেকে নিয়ে যায়। আমরা সেখান থেকে মেয়েকে না নিয়ে চলে আসি এবং মেয়ের বাবা বাদি হয়ে বাঘা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। হয়তো তারা মামলার বিষয়ে জানতে পেরে ছাবিদের মামা নাসির কে দিয়ে মেয়ে কে রাখতে পাঠিয়েছে। বিয়ের প্রলভোন দেখিয়ে তারা প্রথমে আইনের আশ্রয়ে যেতে দেয়নি। পরে তার তাদের কথার খেলাপ করেছেন। এ ঘটনায় মেয়েকে অপহরণ ও শ্লীলতাহানী সহ ধর্ষণের বিষয়ে তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানান।
অভিযোগের বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি মানলা রুজু করা হয়েছে। মেয়েকে উদ্ধার করে পরিক্ষার জন্য রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালের ও.সি.সি তে পাঠানো হয়েছে।