চিন্ময়ের আইনজীবীদের দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ!
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের পক্ষে চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবীও দাঁড়াননি। সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের অভিযোগ – মামলা, হামলা এবং হুমকি দিয়ে আদালতে কোনো আইনজীবীকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।
গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে প্রেপ্তার চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীকে আদালতে নেয়া হয়নি। তার এবং তার আইনজীবীদের অনুপস্থিতিতেই জামিনের শুনানির পরবর্তী তারিখ (২ জানুয়ারি) নির্ধারণ করেন চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ মো. সাইফুল ইসলামের আদালত৷
সনাতনী জাগরণ জোট এক বিবৃতিতে ইসকন নেতা ও সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে কোনো আইনজীবীকে জামিন আবেদনের জন্য দাঁড়াতে না দেয়ার অভিযোগ করেছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়, “ইতিমধ্যে যেসব আইনজীবী চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ৭০ জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। অন্য যারা আছেন, তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।” বিষয়টিকে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের চরম পরিপন্থি হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়,” অদৃশ্য চাপে আদালত তার জামিন শুনানিতে দেরি করছেন। আদালত ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন।”
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের প্রশ্ন, ‘‘তাহলে সরকার কী চায়? বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা কি স্বাধীন? এভাবে চললে বাংলাদেশের সনাতনীসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?”
সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভু বলেন,” আসলে আমাদের ৭০ জনের বেশি হিন্দু আইনজীবীকে মামলায় আসামি করায় তারা কেউ আদালতে যেতে পারেননি। তারপরও আমরা ঢাকা থেকে আইনজীবী আনার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু একদিন আগে থেকেই ‘তারা‘ হুমকি দিতে থাকে। সকালে আদালত এলাকায় ‘ওই আইনজীবীরা’ মিছিল বের করে, ফলে আমাদের পক্ষে আইনজীবী দেয়া সম্ভব হয়নি।” এ সময় দুজন আইনজীবীর নাম উল্লেখ করে তার ওপর হামলা এবং অন্য জনের ভয়ে আত্মগোপনে থাকার কথাও বলেন গৌরাঙ্গ দাস প্রভু, ‘‘এর আগে আইনজীবী রিগ্যান আচার্যের চেম্বারে হামলা হয়েছে। তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে আহত করা হয়। আইনজীবী শুভাশীষ ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।”
তারা বৈষম্যের শিকার- এমন অভিযোগও উঠে আসে তার কথায়, “৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মূল বিষয় হলো বেষম্যহীন রাষ্ট্র । অথচ আমরা এখন বৈষম্যের শিকার।”
চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর(পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া মনে করেন, ‘‘কোনো আইনজীবীকে আসতে দেয়া হয়নি এই অভিযোগ ঠিক নয়।” তিনি বলেন, ‘‘চিন্ময় দাশের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী আসেননি। জামিন আবেদনের জন্য মামলাটি এক নাম্বারে ছিল। কিন্তু আদালত বার বার ডাকার পরও চিন্ময় দাশের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।”
মফিজুল হক ভুঁইয়ার দাবি, “আদালত এলাকায় যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল। আমি নিজেও কোতোয়ালী থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যাপারে আগেই নিশ্চিত হয়েছি। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ছিল। কিন্তু চিন্ময় দাসের পক্ষে কোনো আইনজীবী না আসলে কী করা যাবে?”
চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষের কোনো আইনজীবী না এলেও মঙ্গলবার চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গনে অনেক আইনজীবী মিছিল করেছেন৷ সেই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মফিজুল হক ভুঁইয়া বলেন,” আদালত এলাকায় তো আইনজীবীরা মিছিল করেন। এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মিছিল করে। এটা অতীতেও হয়েছে।”
সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দাস প্রভুর বক্তব্যে উঠে আসা আহত আইনজীবীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আইনজীবীদের ওপর তো হামলা হয়। আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে তো হত্যাই করা হলো।”
মঙ্গলবার চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ থাকায় সকাল থেকেই চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ছিল কঠোর নিরাপত্তা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য আদালত এলাকার বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেন। আইনজীবী সমিতির নেতা ও সাধারণ আইনজীবীদের একাংশকে সকালে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করতে দেখা যায়।
সনাতনী জাগরণ জোটের প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ প্রভু চট্টগ্রাম মহানগর পিপি এডভোকেট মফিজুল হক ভূইয়ার মন্তব্য প্রত্যাখান করে তিনি বলেন, সনাতনী আইনজীবী, আওয়ামী আইনজীবী ও চিন্ময় প্রভুর আইনজীবী তথ্য যারা চিন্ময় প্রভুর পক্ষে লড়বে তাদের অনেককেই হুমকি দিয়েছে আদালতে না আসতে। তারা যদি হুমকি দেন, তাহলে আসবে কেমনে? অন্যায়ভাবে সনাতনী আইনজীবী ও সাধারণ মানুষকে মামলার আসামি করা হচ্ছে এবং অবৈধভাবে আটক করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।