নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যক্রম ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীর সনদ বাতিলসহ বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি ২০২৫) রেজিস্ট্রার দপ্তরের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানানো হয়, আবাসিক হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুইজনকে স্থায়ী বহিষ্কার ও স্নাতক সনদ বাতিল, দুইজনের স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল, দুইজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শাস্তি পাওয়া নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ওরফে যাযাবর নাঈমকে (ফোকলোর বিভাগ ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার, সাবেক উপ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লকে (আইন ও বিচার বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার ও স্নাতকের সনদ বাতিল, সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছের (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল, ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহমেদ তুহিনকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) স্থায়ী বহিষ্কার ও স্নাতকের সনদ বাতিল, ছাত্রলীগ কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির (অর্থনীতি বিভাগ, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল করা হয়েছে।
বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া নেতাকর্মীদের মধ্যে বর্তমান কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সামিউল হক হিমেলকে (টিপিএস বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর, সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর, ছাত্রলীগ কর্মী রেজওয়ানুল কবীর রাব্বিকে (ইইই বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, আবু রায়হানকে (লোকপ্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, গালিব ফয়সাল নির্ঝরকে (ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ,২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) দুই বছর, সৌমিক জাহানকে (চারুকলা বিভাগ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ) তিন বছর, নাঈমুল ইসলাম অনিককে (আইন ও বিচার বিভাগ, স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ) সায়েন্স,২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) এক বছর এবং আব্দুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে (চারুকলা ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী হাবিবুল্লাহ (আইন ও বিচার বিভাগ স্নাতকোত্তর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতকোত্তর সনদ ও নয়ন হাসানের (ইএসই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) স্নাতক সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে
হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ ও আরেক ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ও আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীবের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েক দফায় মারধর করেন আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। এই ঘটনায় সেদিনই তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তৎকালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও শৃঙ্খলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট এই শাস্তির ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
এছাড়াও গত ২৭ নভেম্বর দর্শন বিভাগের ১৩,১৪,১৫তম সিনিয়রদের সাথে ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ধাওয়া পালটা ধাওয়ার ঘটনায় ১৬ তম ব্যাচের রাসেলকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার, আকমল হোসেন শাকিরের হলের সিট বাতিলসহ ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের আচরণের ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও সিন্ডিকেট কমিটির সদস্য সচিব ড. মিজানুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই শাস্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।