July 11, 2025, 2:55 am
শিরোনামঃ
নওগাঁর মুক্তির মোড়ে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল। বিয়ের ৩১ বছর পর একসঙ্গে দাখিল পাস করলেন সাংবাদিক কাইসার হামিদ ও রোকেয়া আক্তার দম্পতি। বাগেরহাট কচুয়ায় ইউএনও বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন । টানা বর্ষণে উপড়ে পড়ল ৩০ বছরের পুরনো গাছ। কালিয়াকৈর অজ্ঞাত অর্ধগলিত যুবকের মরাদেহ উদ্ধার। রাজবাড়ীর পাংশায় কলেজের ওয়াশরুমে ধ`র্ষ`নে`র অভিযোগে ধ`র্ষ`ক গ্রে`ফ`তার। গোপালগঞ্জে ভালো কাজের স্বীকৃতি পেলেন ডিএসবির এএসআই মোঃ মনিরুল ইসলাম মনির বীরগঞ্জের সাতখামার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীর কেউ পাস করেনি, হতাশ অভিভাবকরা। নরসিংদীর মাধবদীতে ১২ লক্ষ টাকার গাঁজা সহ গ্রেপ্তার দুই । বীরগঞ্জে জমি বিরোধের জেরে কর্মচারীকে কুপিয়ে জখম, থানায় মামলা দায়ের।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মো. কামাল উদ্দীনের প্রবন্ধ: পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষায় ঐতিহাসিক দায়িত্ব

স ম জিয়াউর রহমান

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে মো. কামাল উদ্দীনের প্রবন্ধ: পরিবেশ ও মানবাধিকার রক্ষায় ঐতিহাসিক দায়িত্ব

 

চট্টগ্রামের কদম মোবারকস্থ চট্টগ্রাম একাডেমি মিলনায়তনে ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং এ্যাড ভিশন বাংলাদেশ (পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা) যৌথভাবে এ আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট এন্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল আজিজ। উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দীন ফারুক।প্রধান আলোচক হিসেবে বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক মোঃ কামাল উদ্দীন মানবাধিকার রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “মানবাধিকার হলো মানুষের মৌলিক অধিকার, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান। পরিবেশের ক্ষতি মানবাধিকারের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, কারণ এটি খাদ্য, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।”
তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে মারাত্মকভাবে পড়ছে। এ বৈষম্য দূর করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় উদ্যোগ ও জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তরুণ প্রজন্মকে এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে।” বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও লেখক মোঃ কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিঃ জাবেদ আবছার চৌধুরী (ভাইস প্রেসিডেন্ট, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল), এবং জনাব হাবিবুর রহমান হাবিব (চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ বৈষম্যরোধে সংস্কার আন্দোলন)। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এম.এ. সবুর (মহাব্যবস্থাপক, ফুলকলি ফুড প্রোডাক্টস লিঃ) এবং বিশিষ্ট সংগঠক ও ব্যবসায়ী মোঃ হেলাল উদ্দিন সিকদার। অনুষ্ঠানে বক্তারা মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তারা পরিবেশ রক্ষা এবং মানবাধিকারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। আলোচনা সভাটি সকলের মাঝে মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণের প্রতি গভীর সচেতনতা এবং প্রতিশ্রুতি জাগিয়ে তোলে। প্রধান বক্তা মো. কামাল উদ্দিন আরো বলেন মানবাধিকার ও পরিবেশ রক্ষা—ইতিহাসের ধারায় আমাদের দায়িত্ব
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষ্যে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে পেরে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। মানবাধিকার ও পরিবেশ সংরক্ষণ একটি অখণ্ড বিষয়, যা আজকের সভার মূল প্রতিপাদ্য। ইতিহাসের পাতায় ফিরে তাকালে আমরা দেখতে পাই, মানবাধিকারের মূল ভিত্তি হলো মানুষের সম্মান, মর্যাদা এবং সমতার নীতি।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ “সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র” গ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। এ ঘোষণাপত্রের লক্ষ্য ছিল বিশ্বজুড়ে মানুষের মৌলিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই সংগ্রামের শুরু আরও আগে, বিশেষ করে মার্কিন স্বাধীনতা আন্দোলন (১৭৭৬) এবং ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) মানবাধিকারের পথিকৃৎ হয়ে ওঠে। আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাসেও মানবাধিকার রক্ষার আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি ছিল না, বরং এটি মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠারও একটি লড়াই ছিল। তবে মানবাধিকারের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কও গভীর এবং ঐতিহাসিক। প্রাচীন সভ্যতাগুলো—যেমন মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু, এবং মিসরীয় সভ্যতা—প্রমাণ করে যে মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সমন্বয় করে টিকে ছিল। কিন্তু আধুনিক শিল্পবিপ্লবের পর থেকে পরিবেশ দূষণ এবং প্রকৃতির অবমূল্যায়ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
আজ জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় হুমকি। গবেষণা দেখায়, উন্নত দেশগুলোর শিল্পায়নের ফলে কার্বন নিঃসরণের দায় বহন করছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। বাংলাদেশের মতো দেশের মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মুখোমুখি হচ্ছে, যা তাদের খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্য এবং জীবিকার মতো মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করছে।
মানবাধিকার রক্ষার লড়াই শুধু ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, এটি চলমান একটি সংগ্রাম। ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, কিন্তু একই সঙ্গে আমরা শিখেছি মানবাধিকার রক্ষার জন্য কীভাবে আত্মত্যাগ করতে হয়।
তাই আজকের দিনে আমাদের প্রশ্ন করা উচিত: আমরা কী করছি?
১. মানবাধিকার রক্ষার জন্য আমাদের আইন ও নীতিমালা কতটুকু কার্যকর?
২. পরিবেশ রক্ষায় আমরা কতটা আন্তরিক? আমি মনে করি, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব রয়েছে।
প্রথমত, জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের অধিকার ও পরিবেশ রক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে স্কুল-কলেজে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি পর্যায়ে পরিবেশবান্ধব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান বৈশ্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সম্ভব। আমাদের দায়িত্ব হলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়া। মানবাধিকার রক্ষা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ একটি অবিচ্ছেদ্য লড়াই। আমরা যদি এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পারব।
পরিশেষে, আমি আহ্বান জানাই—আসুন, আমরা সকলে একসঙ্গে মানবাধিকার এবং পরিবেশ রক্ষার জন্য কাজ করি। এই লড়াই শুধুমাত্র একটি দিনের জন্য নয়, এটি প্রতিদিনের দায়িত্ব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা
Skip to toolbar