সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের ১ একর ৩১ শতক জমি বাদ রেখে করা হয় সরকারীকরণ
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজ। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন পর সরকারিকরণ হয় ২০১৮ সালে। কিন্তু কলেজটি সরকারিকরণে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিভাগ কর্তৃক প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৬ সালে।সার্বিক বিষয়ে যাচাই-বাছাই করার পর ৩ মে ২০১৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবকে গ্রহীতা উল্লেখ করে মাহতাব উদ্দিন কলেজের পক্ষে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল দাতা হিসেবে কলেজের নামে থাকা মোট ৭ একর সাড়ে ২৬ শতক জমির মধ্যে ৫ একর ৯৫ শতক জমির দানপত্র দলিল করে দেন। কলেজের নামে থাকা ১ একর ৩১ শতক (কলেজ অডিটোরিয়াম ও অনার্স ভবনের পেছনের পুকুর অংশ) জমি বাদ রেখেই সরকারিকরণের কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে ৮ আগস্ট ২০১৮ সালে মাহতাব উদ্দিন কলেজ সরকারিকরণ হয়। সরকারিকরণের দীর্ঘ কয়েক বছর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে কলেজটির অধ্যক্ষ ড.মাহবুবুর রহমান জমি সংক্রান্ত জটিলতার ব্যাপারটি জানতে পারেন। তখন তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন বাদ রাখা জমি সরকারের অধিভুক্ত করতে। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক সরকারি কেসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক অশোক কুমারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।কলেজটির অনার্স ভবন ও অডিটোরিয়াম এর পেছনের ১ একর ৩১ শতক বর্তমানে কলেজের দখলেই রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজটির একজন শিক্ষক জানান, কলেজ পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার নাকি এই জমিতে একটি সেন্ট্রাল লাইব্রেরী করবেন এমন পরিকল্পনা থেকে এই জমিটুকু বাদ রেখে বাকি জমি সরকারি অধিভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন সে সময়ের দায়িত্বশীলদের ।
তৎকালীন সময়ে মাহতাব উদ্দিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডলের সাথে কলেজের জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, শিক্ষা বিভাগের লিখিত আদেশে উপজেলা ভূমি অফিস কর্তৃক সহকারী কমিশনারের (ভূমি) প্রত্যয়নে উল্লিখিত নিষ্কণ্টক জমি সরকারের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। সরকার লিখিতভাবে “নিষ্কণ্টক” শব্দটি উচ্চারণ না করলে আমি সে সময় সম্পূর্ণ জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিতাম। ঐ জমিটিতে এখনো মামলা রয়েছে। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন মামলাও চালিয়েছি। অবসর গ্রহণ করায় বর্তমানে কি অবস্থায় আছে তা আমি বলতে পারব না। ওই জমিতে একটি বড় পুকুর রয়েছে যা কলেজের অধীনে ইজারা দেয়া হতো।আমার সময় প্রতি বছর ইজারার টাকা কলেজ ফান্ডে জমা হতো বলেও তিনি জানান। সরকারি মহতাব উদ্দিন কলেজের জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা অধ্যাপক অশোক কুমারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলেজের বেশ কয়েকটি ব্যাপারে তদন্ত করেছি ; তার মধ্যে জমিও রয়েছে। আমি তদন্ত করে দেখলাম, মাহতাব উদ্দিন কলেজের নামে থাকা ৭ একর সাড়ে ২৬ শতক জমির মধ্যে নিষ্কণ্টক জমির পরিমাণ হলো ৫ একর ৯৫ শতক।বাকি জমি নিস্কন্টক না হওয়ায় এবং ওই জমিতে মামলা চলমান থাকায় তা সরকারের খাতে রেজিস্ট্রি হয়নি। মামলা নিষ্পত্তি হলে পরবর্তীতে ঐ সম্পত্তি সরকারি খাতে তালিকাভুক্ত হবে। সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ ড.মাহবুবুর রহমান বলেন, কলেজের নামে থাকা অবশিষ্ট জমি যা সরকারকে লিখে দেওয়া হয়নি তা নিষ্কণ্টক করে অচিরেই সরকারকে লিখে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তৎকালীন সময়েই জমি সংক্রান্ত বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে সঠিকভাবে করার দায়িত্ব থাকলেও তা সে সময় করা হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদপ্তর তদন্ত প্রতিবেদনে যে সুপারিশ করেছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। উল্লেখ্য, কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজ একমাত্র সরকারি কলেজ। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী পাস কোর্স, বিএম শাখা এবং চারটি বিষয়ে অনার্স পড়ছে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী। সরকারি মাহাতাব উদ্দিন কলেজের নামে থাকা বাকি জমি অতি সত্তর সরকারি তালিকাভুক্ত হবে এমনটিই আশা করেন সচেতন মহল।