January 21, 2025, 6:03 pm
শিরোনামঃ
লালমনিরহাটে ইটভাটায় অভিযান, জরিমানা ৫ লাখ ২০ হাজার কুড়িগ্রামে পৃথক ঘটনায় ৩ শিশুর লাশ উদ্ধার ময়মনসিংহে পিস্তলসহ ছাত্রদলের নেতা গ্রেপ্তার মাদারীপুরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সহ ৩ জন আটক,ইয়াবা উদ্ধার ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট ১৮ লক্ষ টাকা জরিমানা বাণিজ্য মেলায় নকল পন্যের ছয়লাভ ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে লক্ষ টাকা জরিমানা গাজীপুরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ প্রস্তুতি সভায় মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম অমর একুশে বইমেলা ১ ফেব্রুয়ারি থেকে জিমন্যাশিয়াম চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার মুকসুদপুরে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে ৮টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ২৩ হাজার টাকা জরিমানা

চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের মহাসমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম- সনাতনীদের দেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ

স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :

চট্টগ্রামে সনাতনী সম্প্রদায়ের মহাসমাবেশে লাখো মানুষের সমাগম-
সনাতনীদের দেশ থেকে
উৎখাতের চেষ্টা করলে
পরিণতি হবে ভয়াবহ

 

‘আমার মাটি আমার মা , এ দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না; দিয়েছি তো রক্ত আরও দেব রক্ত, রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়; কুরুক্ষেত্রের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার; হর হর মহাদেব, জয় শ্রী রাম, জয় শ্রী কৃষ্ণ’ স্লোগান দিয়ে লাখ লাখ সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষ মহাসমাবেশ করেছে আজ ২৫ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে। এসময় ধর্মের নামে নির্যাতন বন্ধ না থাকলে এবার প্রতিরোধ করা হবে এবং সনাতনীদের এদেশ থেকে উৎখাতের চেষ্টা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
৮ দফা দাবি আদায়ে সকল সনাতনী সংগঠন ও সনাতনীদের ঐক্য মোর্চা ‘বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ’ বাংলাদেশের হিন্দুদের মঠ-মন্দিরে হামলা বাড়িঘরে লুট, অগ্নিসংযোগ, হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার অপরাধে চাকরি থেকে অব্যাহতিসহ হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে।
বেলা আড়াইটা থেকেই চট্টগ্রামের লালদিঘী মাঠে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড এবং আশপাশের উপজেলা থেকে সনাতনী সম্প্রদায়ের মানুষের মিছিল এসে জমায়েত হয়। বিকালে ৩টার পরপরই সনাতনী সম্প্রদায়ের জনস্রোতে লালদিঘী মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। তখন মঞ্চে বিভিন্ন মঠ মন্দিরের সাধুসন্তরা বক্তব্য রাখছিলেন। ঘড়িতে সময় যখন বিকাল ৪টায় তখন লালদিঘী, সিনেমা প্যালেস, জেলা পরিষদ ভবন, কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে সড়ক, নবগ্রহ বাড়ি সড়কে ছড়িয়ে পড়ে মহাসমাবেশে আগত সনাতনীদের উপস্থিতি। বিভিন্ন উপজেলা এবং নগরীর পাড়া থেকে আসা মিছিলের অগ্রভাগেই ছিল নারীদের বিপুল উপস্থিতি। এছাড়া প্রতিটি মিছিলেই বয়স্ক নারী পুরুষের পাশাপাশি কিশোর ও তরুণদের আধিক্য ছিল চোখে পড়ার মত।
লাখ লাখ সনাতনী সম্প্রদায়ের এ সমাবেশে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, যে মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ৬ দফা দাবি হয়েছিল সে মাঠে বাংলাদেশে সব মঠ মিশনের সাধুরা সমবেত হয়েছে সনাতনীদের দাবি আদায়ে। সনাতনীদের ওপর যতই নিপীড়ন হবে আমরা তত বেশি ঐক্যবদ্ধ হব। আমাদের এ ঐক্যকে কোনভাবেই বিভক্ত করতে পারবেন না। এই ঐক্য বাংলার। এটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বির্নিমানের ঐক্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে , যারা আত্ম বিসর্জন দিয়েছেন তাদের স্মরণে এই ঐক্য। শুক্রবার সকালে প্রর্বতক মন্দিরে সব সাধুরা বৈঠক করেছি। একটি সমন্বয়ক পরিষদ গঠন হয়েছে। এতদিন আমাদের অভিভাবক ছিল না। এখন পরিষদ হয়েছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। সনাতনীরা সর্বদা সাহসী। যারা ভীতু তারা এ বঙ্গের পুত্র হতে পারে না। এ বঙ্গের উত্তরাধিকার আমরা।
সনাতনীদের উৎখাতের চেষ্টা করবেন না হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করেন তাহলে এ ভূমি আফগানিস্তান হবে , সিরিয়া হবে। সাম্প্রদায়িক আচরণ করে বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার সুযোগ পাবে না। ক্ষমতার পটপরিবর্তন হচ্ছে বারবার, এদেশে স্থিতিশীলতা আসছে না। কারণ সহনশীলতা লুপ্ত হচ্ছে। সম্মানবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, শিক্ষককে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু পরিচয়ে ৯৩ জনকে পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দুর্ভাগ্য বিষয় ভেটেরিনারি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। মাঝখানে কিছুদিন এমন অপকর্ম থেমে গিয়েছিল এখন আমার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এসব কাজ বাংলাদেশের সংস্কৃতির পরিপন্থি। আমরা আর নীরব থাকব না, মাঠে নেমেছি। কেউ যদি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনায় জড়িত থাকে তাদের আসামি করুন, বিরোধীতা করব না। কিন্তু বেছে বেছে মামলায় আসামি করা হচ্ছে, এসব বন্ধ না করলে সহনশীলতা নষ্ট হবে। সনাতনীদের বাদ দিয়ে কোনো রাষ্ট্র পরিচালনার প্রচেষ্টা কখনো করবেন না। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল ৪টি মূলনীতিতে। আমাদের দলীয় পরিচয়ে নমিনেশন দেওয়া হয়। হিন্দুদের অস্তিত্বের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা গণতন্ত্রের নামে প্রহসনকে মেনে নেব না।
চিন্ময় কৃষ্ণ বলেন, বাংলাদেশে আমরা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন চাইছি, সংখ্যালঘু কমিশন চাইছি, মন্ত্রণালয় চাইছি। বাংলাদেশে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে-আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে সংবিধান সংশোধনকে মানব না। পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হিন্দু হয়েছে। আর এদেশে একজনকে করে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছেন। জেএমসেন হলে মামলায় আসামিদের জামিন হয়ে গেল। অথচ আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে।
মহাসমাবেশে তিনি বলেন, বহুদিন উপেক্ষিত হয়েছি, আমরা ত্যাগী সাধুরা এ আন্দোলনের মুখ হবে এবং নেতৃত্ব দেবে। এ আন্দোলনের বাধাগ্রস্ত করা যাবে না। এ আন্দোলনকে হারিয়ে যেতে দিব না। রংপুরে, খুলনা, বরিশালে মহাসমাবেশ হবে। প্রতিটি জেলায় সমাবেশ, উপজেলায় সমাবেশ হবে। সুশৃঙ্খল আন্দোলন এটি, রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। আজকের সমাবেশে একটি তথাকথিত পোর্টাল ইসকনের সমাবেশ ছাত্রলীগ যোগ দিচ্ছে বলে প্রোপাগান্ডা করেছে। এ নিয়ে সরকারের কোনো এজেন্সি প্রতিবাদ করেনি। আমাদের সমাবেশকে রাজনৈতিক ট্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগ হয়েছে, কেউ আজকে জামায়াত, বিএনপি ও সমন্বয়ক পদ দিয়ে ক্ষমতার অংশীদার হয়েছে, এতে কিন্তু আপনাদের দোষ নাই, শুধুমাত্র হিন্দুদের দোষ। এ প্রবণতা পরিহার করুন। এদেশের জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ রয়েছি এখনো, নিঃশেষিত হয়নি। আমরা পিছিয়ে যাব না, হারিয়ে যাব না। এ ভূমিকে আগলে রাখব। এ দেশমাতৃকাকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিব না। আমাদের আন্দোলনকে অন্যরূপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন না, এখানে কেউ নেতা নয়। সুতরাং , মাতৃভূমি রক্ষার জন্য সর্ব অবস্থায় সচেতন থাকব। এলাকায় এলাকায় এক একটা যুব গোষ্ঠী গড়ে তুলুন। আমাদের দেবালয় আমরা পাহারা দিব।
সমাবেশে কৈবল্যধাম আশ্রমের মহারাজ কালীপদ ভট্টাচার্য্য বলেন, সনাতনী সমাবেশ যাতে উজ্জীবিত হয় এজন্য ঐক্যবদ্ধ হন। সনাতনী সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন ৮ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। মৃত্যু হবেই, ভয় নেই। মৃত্যুকে ভয় করলেই চলবে না, এ মাতৃভূমিতে আমরা উড়ে এসে বসিনি।
গোপীনাথ দাস ব্রহ্মচারী বলেন, যে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হল সেখানে প্রশাসনের ব্যবস্থা থাকার পরও কেন ষষ্ঠী পূজার দিন প্রতিমা ভাঙা হল? বিসর্জনে কেন ঢিল ছোঁড়া হল। এসবের জবাব দিতে হবে। সনাতনীরা বাঙলাতে জন্মেছে, এখান থেকে বিতাড়িত করার দুঃসাহস কারও নেই। সনাতনী ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি বিদ্রুপ আলোচনা করে তাহলে কোনো সনাতনী বসে থাকবে না। আমরা কোনো রাজনৈতিক নেতার পা ধরে বাঁচি না। ধর্মান্তরিত করার জন্য একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে। নিজেদের ধর্ম রক্ষার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। দাবি না রাজপথে থাকব। দাবি আদায় না হলে নবজাতক নিয়েও রাজপথে নামব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা