ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী ধামের গান বিলুপ্তির পথে !
ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ধামের গানের ব্যাপকতা দিন দিন কমছে। এক সময় প্রতি পাড়ায় পাড়ায় চলতো এ ধামের গান । গ্রাম্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত যুবকদের পরিবেশিত এ ধামের গানের আসরে পরিবারের সব বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ সকলে এক কাতারে বসে রাতভর তা উপভোগ করত। করুন উপজীব্য বিষয়ে সকলে চোখের জল ফেলে আবেগে আপ্লুত হতো। প্রতি বছর কার্তিক মাসে লক্ষ্মীপূজায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ঠাকুরগাঁও জেলার সর্বত্র লক্ষ্মীধামের গানের আসর আয়োজন করে থাকে। প্রতিবারের মতো এ বছরেও শুরু হয়েছে ধামের গানের আসর। হিন্দু মুসলমান সহ সকল ধর্মের নারী-পুরুষ শিশু বৃদ্ধ একই কাতারে বসে এসব গান উপভোগ করে থাকে। ঠাকুরগাঁও জেলায় এবার প্রায় ১শত ধামের গানের মঞ্চ হয়েছে। দারিদ্রতার কষাঘাতে জনপ্রিয় এই ধামের গান হারিয়ে যেতে বসেছে। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা ছাড়াই স্থানীয় যুবকরা গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে এ গানের আয়োজন করে থাকে। আদায়কৃত অর্থ পালাকারদের সম্মানী হিসেবে ব্যয় করা হয়। পালার মান-যাচাই করে প্রতিটি পালাকে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সম্মানী দেওয়া হয়। ধামের গানের মজার ব্যাপার হলো, নাটকের বিভিন্ন নারী চরিত্রে পুরুষরাই মহিলাদের কাপড় পরে লম্বা চুলের ঝুঁটি, মাথায় খোঁপা, নাকে নাকফুল, কানে দুল পরে অভিনয় পরিবেশন করে। তাদের চেনা দায় হয়ে পড়ে। ধামের গানে পুরুষ চরিত্রটি যেন এক অপূর্ব সৃষ্টি। ধামের গানে ছেলে থেকে মেয়ে সেঁজে অভিনয় করছেন খকেন পাল। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত বছর যে জায়গাগুলোতে ধামের গান বসত সেগুলোর অনেক জায়গায় এবার গান বসেনি। আগের মত আর এই ধামের গানের জনপ্রিয়তা নেই। আগে দিন রাত তিন দিন আসরগুলোতে গান চলত। এখন চলে না। তিন দিনের মধ্যে ১/২ দিন গান চলে। টাকা কম দেয় বলে অনেক মানুষ আর এই গানে অভিনয় করতে চায় না। সালন্দর ইউনিয়নের সিংপাড়ায় গান করতে আসছেন নেকমরদ হাট থেকে ১৬ দলের সরদারনি নামে একটি যাত্রাপালা। সেই যাত্রাপালার মাস্টার জিতেন পাল বলেন, ‘হামার গ্রামত যে ঘটনালা ঘটে সে ঘটনালা দিয়া হামরা গান তৈরি করি। অনেক সময় বই থেকেও হামরা গান তৈরি করি। ছেলেরা মেয়ে সাজে অভিনয় করে। আর মানুষজন এইসব দেখে মজা করে আনন্দ করে।’ আকচা পালপাড়া গ্রামের ধাম গান কমিটির সভাপতি মহেন্দ্র পাল বলেন, ‘আগে আমাদের এই আসরে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ধামের গান হতো। এখন আর হয় না, শুধু রাতে হয়। তাও দল নাই দল তেমন আসে না। তবে আমরা প্রতি বছর গানের দলগুলো নিয়ে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে থাকি। এবার যে দল প্রথম হবে তার জন্য প্রথম পুরস্কার টিভি, দ্বিতীয় বাইসাইকেল, আর তৃতীয় পুরস্কার হারমোনিয়াম।’এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন, ‘ধামের গান অত্র এলাকার লোকজ সংস্কৃতির একটি অংশ। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে এ সংস্কৃতি আজ বিলুপ্তির পথে। তাই সেটি রক্ষায় সরকারিভাবে আমরা সাহায্য সহযোগিতা করব।’