শেখ হাসিনাকে ফাঁসিতে হত্যার হুমকি প্রতিবাদ জানালো আওয়ামী লীগ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার যে হুমকি দিয়েছে, তা বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসনের প্রতি চরম অবমাননা বলে উল্লেখ করে এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
২১ অক্টোবর রবিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুকে পেইজে দেওয়া এক বিবৃতিতে এই প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার যে হুমকি দিয়েছে, তা বিচার বিভাগ এবং আইনের শাসনের প্রতি চরম অবমাননা। এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা জানাচ্ছে।”
“বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রতিশোধ নিতে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এবং অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুনালে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার পরিকল্পনা করছে এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে কাল্পনিক ও মনগড়া তথ্যের ভিত্তিতে গণহত্যার মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদের বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের প্রধান আইনজীবীকে ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিযেছে। আইনের শাসনের সকল নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।”
“পাশাপাশি, দল হিসেবে মুক্তি সংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার হীন উদ্দেশ্যে অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকার বেআইনিভাবে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। সর্বোপরি, আজ এই অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে যে, শেখ হাসিনা ফাঁসির কাষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যই দেশে ফিরবেন। এই ঘোষণা নগ্ন ভাবে এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশে আজ ন্যায়বিচার ও বিচার বিভাগের কোন স্বাধীনতা নেই। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ছিটে ফোটাও নেই। দেশটিকে তারা বর্বর মধ্যযুগে নিয়ে গেছে।”
সেখানে বলা হয়, “বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী এই অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের এ সকল কর্মকাণ্ড অবলোকন করলে এটি পরিষ্কার যে, তারা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে হত্যা করতে চায়। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে কাল্পনিক ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে গণহত্যার মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে। এই মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় শেখ হাসিনাকে প্রহসনমূলকভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার যে নীলনকশা চূড়ান্ত করেছে, নাহিদ ইসলাম আজ প্রকাশ্যে সেটিই ঘোষণা করলো। বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই নীলনকশাকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে এবং তার বিচারের ভার দেশবাসী ও বিশ্ব বিবেকের নিকট রাখছে।
৩০ লক্ষ মানুষের জীবন উৎসর্গের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধের নীতির উপর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ জুলাই থেকে শুরু করে পরবর্তীতে যতগুলো সহিংসতা-নাশকতার ঘটনা ঘটে, যতগুলো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়, সবগুলোকে তদন্ত করে একটি সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়ায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি (তদন্ত) কমিটি’ গঠন করেছিলেন।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বিচার বিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ তখনই নেয়া হয়, যখন একজন সরকার প্রধানের সত্যিকারের অর্থে সদিচ্ছা থাকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধুমাত্র ‘জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি’ কমিশনই গঠন করেননি তিনি জাতিসংঘের সহায়তা নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে লক্ষে তিনি জাতিসংঘকে একটি বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। জাতিসংঘ ছাড়াও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থাও যদি তদন্ত প্রক্রিয়ায় কারিগরি সহায়তা দিতে চায়, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করার স্বার্থে তিনি সে উদ্যোগও গ্রহণ করেছিলেন।
অর্থাৎ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে একটি সদিচ্ছা ছিলো সকল নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গুলোর স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা।”
“অথচ আমরা দেখলাম, ইউনূস সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই শেখ হাসিনা সরকারের দ্বারা গঠিত ‘জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি কমিটি’কে ভেঙে দিল। ইউনূস সরকার শুধু তদন্ত কমিটিই ভেঙে দেয়নি, এখন তারা বলছে, যতগুলো হত্যাকাণ্ড ও নাশকতা-সহিংসতা হয়েছে সেগুলোকে তারা বিচারই করবেনা।
৫ আগস্ট এবং পরবর্তী সময়ে সারাদেশে পুলিশ হত্যাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদের উপর হত্যাসহ ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়েছে যা গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে।”
দেশে ব্যাপক অরাজকতা চলছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “দেশে আজ ব্যাপক অরাজকতা চলছে। কারো জানমালের বিন্দুমাত্র নিরাপত্তা নেই। যত্রতত্র মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে। হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ৫ আগস্টের পর সারা দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, বাড়ি-জমি-দোকানপাট- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, চুরি- ডাকাতি প্রতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত সকল জঙ্গি, শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সারাদেশে আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে। মন্ত্রী- এমপি, সরকারের সিনিয়র কর্মকর্তাসহ অসংখ্য মানুষকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের উপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। মামলায় অন্তর্ভুক্ত এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের পক্ষে আইনজীবীরা পর্যন্ত আদালতে যেতে পারছেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
দেশের সরকারি বেসরকারি সকল গণমাধ্যমে সম্পূর্ণ ‘ইনফরমেশন ব্ল্যাকআউট’ চলছে। ৫ আগস্ট ও পরবর্তীতে সংঘঠিত গণহত্যাসহ অগ্নিসন্ত্রাস, নির্যাতন ও অন্যান্য অপরাধের কোনো খবর দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। একই অবস্থা এখনও চলমান। এ অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠী অখুশি হতে পারে- এ ধরনের কোনো তথ্য দেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে না।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর ব্যাপক নিপীড়ন মূলক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় আইন ও পলিসি বিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশপ্রেমিক সশস্ত্রবাহিনীকে ধ্বংস করার চক্রান্ত হচ্ছে। জাতির বিবেক শিক্ষকদের উপর দেশব্যাপী ব্যাপক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে। অস্বাভাবিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে গেছে যা পরিষ্কার দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস।
অন্যদিকে, দেশকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত করে জাতীয় ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলেছে। এই নিরাপত্তা ঝুঁকি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়, এই অবস্থা আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও গভীর সংকট তৈরি করছে।”
“অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী গোষ্ঠী রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাতিল করছে। এই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে অশুভ শক্তি ৫ আগস্ট সারাদেশে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ধ্বংস করেছে।
জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন যেখানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম- সেই বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া দিয়েছে! ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং ৭ই মার্চ সহ রাষ্ট্রীয় তাৎপর্যপূর্ণ দিবসগুলোকে সরকারি তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের জন্য নানা চক্রান্ত করে যাচ্ছে। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধান ভূ-লুণ্ঠিত করার ষড়যন্ত্র চলছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অসাংবিধানিক ও অবৈধ তথাকথিত অন্তর্বর্তী সরকারের এই ঘৃণ্যতম মধ্যযুগীয়, জঘন্য এবং অসাংবিধানিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ, নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছে। চোখের সামনে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে তারা ধ্বংস করছে- এটি বিবেকবান কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা তা হতে দেব না।
সংবিধান লঙ্ঘনকারী এই অবৈধ গোষ্ঠীকে বলবো, অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এই অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার আদর্শ বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধ করে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে যান। অন্যথায়, ইতিহাস আপনাদের ক্ষমা করবে না।”