January 12, 2025, 10:13 pm
শিরোনামঃ
ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে মার্কিন সরকার যুক্ত নয় : মার্কিন দূতাবাস বীর চট্টগ্রামের গর্বিত সন্তান নাদিম চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার মতো এমন পতন আর কোন সরকারের হয়নি ঢাকা বিভাগ বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদ….. একজন সৎ ও ন্যায় নিষ্ঠাবান সদর জোনের নবাগত এসি দ্বীনে আলম সিলেট-চট্টগ্রাম ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশন ইতালী শাখার উদ্যোগে সুনামগঞ্জ জেলায় শীত উপহার বিতরণ আনন্দঘন পরিবেশে রিদওয়ান হোসাইন নিলয়ের সুন্নতে খৎনা সম্পন্ন বান্দরবানে আর্ন এন্ড লিভের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরন: দৈনিক নতুন ভোর প্রতিনিধি সম্মেলন-২০২৫ অনুষ্ঠিত হয়েছে।  দিরাইয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জমি দখলের অভিযোগ : কুড়িগ্রাম চিলমারীতে প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতে জমি দখলের চেষ্টা

সংকটে দুঃসময়ে নির্ভরতার প্রতীক বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)

এম. এ মুরাদ

সংকটে দুঃসময়ে নির্ভরতার প্রতীক
বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি
সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)

সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান ইসলাম। সর্বশেষ নবী হযরত মোহাম্মদ (দ.) দ্বীন হিসেবে ইসলামের প্রবর্তন করেন। এটি সর্বযুগের সর্বস্তরের মানুষের জন্য চির কল্যাণকর জীবন বিধান। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী আসবে না এবং আর কোনো আসমানি জীবন বিধানও নাজিল হবে না। এটিই চলমান ও কার্যকর থাকবে। এই জীবন বিধান বা দ্বীন এবং কোরআন মজিদকে চলমান ও কার্যকর করার দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ্তালা গ্রহণ করেছেন। আল্লাহ্র দেওয়া এই ধর্ম ও জীবন বিধানের সংরক্ষণ ও প্রচারে প্রিয় নবী (দ.) নিজে তাঁর সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীগণ নিজ নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমতো অবদান রেখে গেছেন। এ ক্ষেত্রে মানব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠতম একটি অংশ আউলিয়ায়ে কেরাম। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বজনবিদিত। মানবতার কল্যাণে তাঁরা নিজেদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। তাঁদের সংস্পর্শে মানুষ ধন্য হয় ও কল্যাণ লাভ করে। তেমনি একজন মহামানব বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) (১৯২৮-১৯৮৮)। তাঁর আবাসস্থল গাউসিয়া হক মন্জিল মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ ফটিকছড়ি চট্টগ্রাম। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন সারা বিশ্বের জন্য এক নেয়ামতস্বরূপ। তিনি ছিলেন বিপদে আশ্রয়, হতাশায় প্রেরণার উৎস, মারেফাত রহস্যের অন্যতম খনি। মাওলানা রুমির ভাষায়-“কামেল অলিগণ আল্লাহ্র বিশিষ্ট বন্ধু। তাঁরা প্রাণজগতের গুপ্তচর। তাদের কাছে অবস্থার গূঢ় রহস্য ব্যক্ত হয়ে পড়ে”। শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র জীবনে এসবের বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছিল। আল্লাহ্্র এবং আল্লাহ্র রাসূলের (দ.) নৈকট্য লাভ করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাদের সান্নিধ্যে থাকতে হবে। বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন সর্বগুণে গুণান্বিত এক মহান ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন কঠোর সংযমী, নম্র, ভদ্র, মিষ্টভাষী এক মহান আদর্শ পুরুষ। সৃষ্টি জগত সম্পর্কে অসংখ্য রহস্যজনক উক্তি এবং তাঁর অজস্র কারামত প্রমাণ করে যে তিনি ছিলেন এই জমানার শ্রেষ্ঠ অলি। তিনি বিশ্বঅলি নামে সুপরিচিত ও বিশ^বরেণ্য। তাঁর অসংখ্য কারামতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি তুলে ধরা হলো।
হাজার ভোল্টের পাওয়ার: চিকিৎসার জন্য ইঞ্জিনিয়ার আলী নবী চৌধুরীর বাসা থেকে ডাক আসে। সেখানে মাইজভাণ্ডার শরিফ এর শাহানশাহ্ এসেছেন। আমি আধ্যাত্মিকতা তেমন মানতাম না। যতদূর সম্ভব পীর-ফকিরদের এড়িয়ে চলতাম। চিকিৎসা আমার পেশা। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও যেতে হলো। চৌধুরী সাহেবের বাসায় পৌঁছে দেখি তিনি একখানা খাটে শুয়ে আছেন। ডাক্তার এসেছেন বলে জানালে বাম হাতখানা বাড়িয়ে দিয়ে বলেন, অসুখ লাগছে, একটু দেখুন তো। আমি ডান হাতে শিরা পরীক্ষা করার জন্য হাত দিতেই আমার মনে হয়েছিল যেন হাজার পাওয়ারের কোন ইলেকট্রিক তারে শক্ খেলাম। সে ঝাঁকুনিতে বহুক্ষণ আমার শরীরের সমস্ত শিরা উপশিরা ঝিম্ ঝিম্ করতে থাকে। আমি হতবিহবল হয়ে বসে থাকি। আমার দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে অনুরূপ ঘটনা কখনো ঘটে নাই। ফলে আমি তাঁর অনুগত ভক্ত হয়ে যাই। বর্ণনাকারী: ডাক্তার আবদুল মান্নান, চিফ মেডিকেল অফিসার, চট্টগ্রাম বন্দর হাসপাতাল। এভাবে অসংখ্য কারামত বিদ্যমান রয়েছে।
শাহানশাহ্ হুজুর (ক.) নানা সময়ে অসংখ্য উক্তিও করেছেন, যেমন- “আমার দরবার প্রাচ্যের বাইতুল মোকাদ্দস, আল্লাহ্র ঘর সকল জাতির মিলন কেন্দ্র”। ঠিকেই তো আল্লাহ্ অলিগণের দরবারে আমির-ফকির, ধনী-গরিব সর্বোপরি কোন ভেদ-ভেদাভেদ নেই। তাঁরা সবার কল্যাণ কামনায় সর্বদা নিয়োজিত। জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আধ্যাত্মিক পবিত্রতার তাগিদ দিয়েছেন, নিজের ভেতরে দৃষ্টি দাও, বহির্জগতের চেয়েও অপরূপ সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখতে পাবে। প্রকৃত অর্থে সুফি সাধকরাই যুগে যুগে মানবজাতিকে আল্লাহ্ প্রাপ্তির সঠিক অনুসন্ধান দিয়েছেন। তাই মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে পাকে ইরশাদ করেছেন ইয়া আইয়ুহাল্লাজিনা আমানুত্তাকুল্লাহ্ ওয়া কুনু মা-আছ্ছাদেকীন (সূরা তওবা: আয়াত ১১৯)। অর্থাৎ হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অনুগামী হও। পবিত্র হাদিস শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধু (অলি)র সাথে দুশমনি রাখবে, আমি (আল্লাহ্) তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করব (বুখারী, হাদিস শরিফ, ৬৫০২)।
শাহানশাহ্ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র জীবনাদর্শের মধ্যে অসংখ্য মানব কল্যাণ নিহিত। স্রষ্টার ধ্যান ও মানবের কল্যাণই ছিল তাঁর জীবনের একমাত্র সাধনা। প্রকৃত অর্থেই সুফি সাধকদের কথা কালাম ও আচরণ উভয়ই অত্যন্ত রহস্যপূর্ণ ও গভীর তাৎপর্যবহ। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ছিলেন স্রষ্টা প্রেমে বিভোর এবং কামনা প্রবৃত্তি মুক্ত। দুনিয়ার কোনো মোহ তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। তাঁর নিকট বর্ণগত বা ধর্মগত কোনো প্রকার ভেদাভেদ ছিল না। তিনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের কথা মনোযোগ সহকারে শুনতেন ও সমাধান দিতেন। পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল উপাদান মনুষ্যত্ব। একটি সুন্দর নির্মল-নিরাপদ সমাজ গঠনে মনুষ্যত্ব অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। একটি সমাজে বসবাসকারীর জন্য দরকার কিছু নিয়মনীতি। রাসুল (দ.)-এর হাদিস শরিফে এসেছে যে ব্যক্তি কোনো মানুষের দুঃখ কষ্ট লাঘব করবে, আল্লাহ্তালা কেয়ামতের দিন তার দুঃখ কষ্ট লাঘব করবেÑ (বুখারি হাদিস-২৪৪২)। মানুষ যেহেতু সমাজে মিলে মিশে বসবাস করে তাই সেখানে স্থানীয়দের সঙ্গে মানবিক আচরণ এবং অসহায়ের প্রতি সহায় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। মূলত শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র মূল দর্শন ছিল এটি। অলিরা হচ্ছেন খোদার গভীর রহস্যের স্বরূপ উদ্ঘাটনকারী। মানুষের মধ্যে থেকে স্রষ্টার প্রতিনিধি নির্বাচন করে মানুষকে সকল সৃষ্টজীবের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে এবং মানুষের মধ্যে থেকেই শ্রেষ্ঠতম বন্ধু নির্বাচন করা হয়েছে। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) হচ্ছেন খোদার রহস্য উদ্্ঘাটনকারী ও শ্রেষ্ঠ প্রেমাস্পদের মধ্যে অন্যতম। প্রকৃতপক্ষে, মানুষ হচ্ছে আল্লাহ্ রহস্য এবং আল্লাহ্ মানুষের রহস্য। তাঁহার পবিত্র নামে গড়ে উঠেছে শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) ট্রাস্ট নামে মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডসমূহ। যেমন-শিক্ষা প্রকল্প, দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা ও প্রকাশনা, মাইজভাণ্ডারী একাডেমি, আত্মোন্নয়নমূলক যুব সংগঠন ‘তাজকিয়া’। শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র একমাত্র সন্তান গাউসিয়া হক মন্জিলের সাজ্জাদানশীন এস জেড এইচ এম ট্রাস্টের সম্মানিত ট্রাস্টি আওলাদে রাসুল (দ.) রাহবারে আলম শাহ্ সুফি হযরত সৈয়দ মোহাম্মদ হাসান মাইজভাণ্ডারী (ম.) প্রকাশ মওলা হুজুর-এর আদর্শের অনূকূলে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে মানবতাবাদী সংগঠন মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ। এই সংগঠনের মাধ্যমে মানবজাতির কল্যাণে অগণিত আশেক ভক্ত খেদমত করে যাচ্ছে। রাহবারে আলম মওলা হুজুর মাইজভাণ্ডারী (ম.) পবিত্র কালামে বলেছেন- নিজেদের মর্যাদাকে, নিজেদের অবস্থানকে উন্নত করার জন্য আল্লাহ্ অলির দরবার একটি অতি উত্তম জায়গা। মূলত শাহানশাহ্ হযরত সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর (ক.) বাস্তব জীবনাদর্শে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিল এটি।
জগত জীবনের অশেষ কল্যাণ সাধন করে ১৩ অক্টোবর ১৯৮৮ সাল, ২৬ আশ্বিন ১৩৯৫ বাংলা, পহেলা রবিউল আউয়াল বিশ্বঅলি শাহানশাহ্ হযরত মাওলানা শাহ্্ সুফি সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.) সৃষ্টির চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী মহান আল্লাহ্র সঙ্গে মহামিলনে জগতের আড়াল হন। এই মহান সাধকের পবিত্র ৩৬তম বার্ষিক উরশ শরিফ মহান ২৬ আশ্বিন ১১ অক্টোবর ২০২৪ ইং যথাযোগ্য মর্যাদায় মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ গাউসিয়া হক মনজিলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই মহতী অনুষ্ঠানকে ঘিরে এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ৮ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই পবিত্র উরশ শরিফ উপলক্ষে এন্তেজাম ও খেদমতে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, বিশেষ করে মাইজভাণ্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় পর্ষদ, এস জেড এইচ এম ট্রাস্ট, দেশ বিদেশের সকল শাখাসমূহ, আশেক ভক্তসহ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহ্ দরবারে শান্তি কামনা করছি আমিন। বেহুরমতে সাইয়্যেদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা