January 14, 2025, 7:24 pm
শিরোনামঃ
MRM Forces Security Service LTD কোম্পানী পরিদর্শন ও সৌজন্যে সাক্ষাতে চাইনিজ জুবাংহু ফরিদ মিয়া মুকসুদপুর প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা মনোনীত হওয়ায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ময়মনসিংহে বিপুল পরিমান নকল ভ্যাটেরিনারি ওষুধ উদ্ধার । রাউজানে বীর মুক্তিযোদ্ধা অনাথবন্ধু স্মরণে সংঘদান ও স্মৃতিচারণ সভা অনুষ্ঠিত মুকুন্দগাতি বাজার বণিক সমবায় সমিতির নির্বাচনে সভাপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভূঁইয়া নির্বাচিত। নিখোঁজ সংবাদ দেশবাসী ও প্রশাসনের কাছে সহযোগিতার আবেদন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ২৫ নং ওয়ার্ড কর্মী সভা অনুষ্ঠিত। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে প্রশাসনিক কমিটি গঠন সংক্রান্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত। চট্টগ্রামে সিডিএ নিউ হকার্স মার্কেট সমিতির কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্র্যাকের দক্ষতা উন্নয়নে অবহিতকরণ সভা

ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ মানুষের কাছে আতংকের নাম ছরোয়ার চেয়ারম্যান!

প্রতিনিধি চট্টগ্রাম

ফটিকছড়ি ও চট্টগ্রাম শহরের সাধারণ মানুষের কাছে আতংকের নাম ছরোয়ার চেয়ারম্যান!

চট্টগ্রাম জেলার বৃহত্তর উপজেলা ফটিকছড়ি উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরের শত শত সাধারণ মানুষের কাছে আতংকের নাম ছরোয়ার চেয়ারম্যান। শত শত মানুষ তার কাছে জিম্মি! কেউ মুখ খুলতে পারে না জীবন মৃত্যুর ভয়ে। তার হাতে নিপীড়ন, নির্যাতন ও হামলা – মামলা এবং রোষানলের শিকার হয়নি এরকম লোক কমই আছে ফটিকছড়ি উপজেলার ৬ নং পাইন্দং ইউনিয়নে ও চট্টগ্রাম শহরের উত্তর পাহাড়তলী এলাকার ইস্পাহানী গোল পাহাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাকে পূঁজি করে ছরোয়ার চেয়ারম্যান নানাভাবে জিম্মি করে ক্ষমতার অপব্যবহার পূর্বক গায়েল করে সাধারণ মানুষকে। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্হ হলেও সাধারণ মানুষ এতোদিন মুখ খুলতে পারেনি ছরোয়ার চেয়ারম্যানের ভয়ে।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেছে। ক্ষমতার পালাবদল হলেও ক্ষমতা বদল হয়নি কখনো দাম্ভিক ছরোয়ার চেয়ারম্যানের। যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দলের লেভাস লাগিয়ে গা ভাসিয়ে রাতারাতি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠে ছরোয়ার চেয়ারম্যান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ৬ নং পাইন্দং ইউনিয়নের মৃত আবুল কালামের সন্তান এ কে এম ছরোয়ার হোসেন স্বপন। ছরেয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিন তিন বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে ক্ষমতার দাপটে বুক ফুলিয়ে চলতো এবং কাউকে কোন কিছু করতে কোন শঙ্কা কাজ করতো না তার। ক্ষমতার দাপুটে ক্ষমতাবান হলেও একাধিকবার নানান মামলায় জেলও কেটেছেন ছরোয়ার চেয়ারম্যান। জেলে গেলেও ক্ষমতা ও টাকার জোরে দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে ধরাকে সরা জ্ঞান না করে দাপটের সাথে চালিয়ে যান অসহায় সাধারণ মানুষ ও তার বিরুদ্ধে অন্যায়ের প্রতিবাদকারীদের উপর নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন। যারা তার অন্যায় ও অত্যাচারের প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে এলাকায় জন্ম সনদ, মৃত্যু সনদ ও ওয়ারিশান সনদ দেয়ার সময় অতিরিক্ত টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও একাধিক স্হানীয় সাধারণ মানুষ স্হানীয় শালিশ বিচারের সময় উভয় পক্ষ থেকে টাকা নিয়ে যে পক্ষ থেকে টাকা বেশি পায় বিচার তার পক্ষে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের আকবর শাহ থানার ইস্পাহানি গোল পাহাড়ে তার ১৬ গন্ডা ৩২ শতক ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হলেও অবৈধভাবে পাহাড় কেটে সাড়ে তিন একর সরকারি জায়গা দখল করে বাউন্ডারি দিয়ে নিজের নামে দখল করার অভিযোগ ওঠেছে। সেখানে ভূমিহীন সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দখল করে বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে আরও জানা, ছরোয়ার চেয়ারম্যানের গোল পাহাড়ের বাসায় স্ক্র্যাপ সাইফুল গ্রুপ নামক একটি সন্ত্রাসী বাহিনী রয়েছে। অনেকের ধারণা সেখানেই সন্ত্রাসী সাইফুলের নিয়ন্ত্রণে ছরোয়ার চেয়ারম্যানের একটি টর্সার সেলও থাকতে পারে। স্হানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছরোয়ার চেয়ারম্যানের সেই বাসায় অনেক সময় মানুষের উচ্চ বাক্য ও কান্নার শব্দ শোনা যায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ছরোয়ার চেয়ারম্যানের লালিত ও আশ্রিত সন্ত্রাসী স্ক্র্যাপ সাইফুলের বিরুদ্ধেও নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজি সহ একাধিক মামলা রয়েছে।
এছাড়াও একই এলাকায় সরগম একাডেমি নামের একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাট করে জায়গা দখলে নেওয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে বলে জানা যায়।
বেপরোয়া ছরোয়ার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ডজনখানেক আদালতে ফৌজদারি অপরাধে মামলা এবং ফটিকছড়ি থানা, আকবর শাহ থানা ও খুলশী থানায় জিআর মামলা রয়েছে। অনেক মামলায় জামিন থাকলেও একাধিক মামলা এখনো বিচারাধীন রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আনীত ফৌজদারি মামলার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি – আকবর শাহ থানা মামলা নং – ২ ( ৯) ২০২২ ধারা : ৩৭৯,৩৮৫,৪২৭,৫০৬(২), আকবর শাহ থানা মামলাননং- ৩৪(০৪)২০২২ ধারা: ৩৮০,৪৪৭,৪২৭,৫০৬(২), সি আর মামলা নং – ২৬৫/২০১৬, চকবাজার থানা, সিএমএম কোর্ট, চট্টগ্রাম। ধারা: ৩৭৯,৪৬৭,৪৬৮,৩৮৫/৫০৬, সিআর মামলা নং-২৭৩/১৯,ফটিকছড়ি থানা, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রাম। ধারা :৪৪৭,৩২৩,৪২৭/৫০৬(২), সিআর মামলা নং ১৮৩/২০১৬ খুলশী, সিএমএম আদালত, চট্টগ্রাম। ধারা : ১৮৮১ এর ১৩৮/১৪০।
গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে চেয়ারম্যান হলেও গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এখন ডিগবাজি খেয়ে রাতারাতি বিএনপি নেতা বনে গিয়ে আবারও ক্ষমতার দাপট দেখানোর একটা মহড়া দিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে তার নির্যাতনের শিকার এক ভুক্তভোগী জানান, ছরোয়ার চেয়ারম্যান রাজনীতি ও টাকার দাপটে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে মানুষই মনে করে না। তাকে আইনের আওতায় আনা না গেলে ফটিকছড়ি উপজেলার ও চট্টগ্রাম শহরের শত শত সাধারণ মানুষ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে ছরোয়ার চেয়ারম্যান এক সময় বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন পরবর্তীতে ফটিকছড়ির সাবেক এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারির সাথে হাত মিলিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন করে নিজের ভাগ্যও বদলে ফেলে। পরবর্তীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি ও আওয়ামী লীগকে কাছে টেনে চেয়ারম্যান হন।
এ নিয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর জানান, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি কোন নির্বাচনে অংশ নেন নি। যেহেতু ছরোয়ার চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেন দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে, তাতে সে বিএনপি হতে পারে না। ছরোয়ার চেয়ারম্যান আমাদের দল বিএনপির কেউ না।
ছরোয়ার চেয়ারম্যানের রাজনীতি ও অভিযোগ বিষয়ে ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্ণেল ( অব: ) আজিম উল্লাহ বাহারের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছরোয়ার চেয়ারম্যান এক সময় আমাদের দল বিএনপির রাজনীতি করতো। পরবর্তীতে আমাদের দল বিএনপি থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে। এরপর আমাদের দল বিএনপিতে আর ফিরে নি এবং তার দলীয় কোন পদ পদবিও নেই। বাহার আরও বলেন, তিনি যদি কোন অপরাধ ও অন্যায়ের সাথে জড়িত থাকে তা আমাদের দল দায় নেবে না। শুধু তিনি নয়, দলের কেন নেতা কর্মী নয় এবং কোন সাধারণ মানুষের অপরাধের দায় আমাদের দল বিএনপি নেবে না। যার যে অপরাধ, দায় তাকেই নিতে হবে।
এদিকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ৬নং পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম সরোয়ার হোসেন স্বপন প্রকাশ ছরোয়ার চেয়ারম্যান এর মুঠোফোন ০১৯৩০৭১৮০৮২ ও ০১৯৭৭০১৪৯৯২ এ একাধিক বার কল দিলেও সংযোগ না পাওয়ায় কোন মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি।
আরেকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, ছরোয়ার চেয়ারম্যান নানাভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে। তার বিচার হওয়া প্রয়োজন।
তারা অবিলম্বে ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, অপরাধ জগতের ডনখ্যাত ও ভূমি দস্যু ছরোয়ার চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুকে আমরা