রাতারাতি মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন হরিজন সম্প্রদায়ের জসিম ওরফে প্রদীপ ভাসপর।
মৌলভীবাজার পৌর শহরের চাঁদনীঘাট ব্রীজ সংলগ্ন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্ম ও শিশু কানুন হাই স্কুলের পাশে চলছে হরিজন সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির জমজমাট মাদক ব্যবসা। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্ম ও শিশু কানুন হাই স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর। স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থী, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও আশপাশে বসবাসকারী পথচারীরা মাতালদের আনাগোনা আর মাদকের গঁন্ধে নাকে ধরে এলাকা দিয়ে যাতায়াত করছেন। আর রাতারাতি মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি হয়েছেন হরিজন সম্প্রদায়ের জসিম ওরফে প্রদীপ ভাসপর। জসিম ওরফে প্রদীপের ঘরে প্রায়ই বসে চেয়ার টেবিল দিয়ে মাদকের আসর।
সূত্র বলছে, পিতা রামরুপ ভাসপর ও মাতা লিলিয়া ভাসপর এর ছেলে কুমিল্লায় জম্ম নেয়া জসিম ভাসপর ২০০৯ সালে মামা মুন্নার মৌলভীবাজার বাসায় আসে। ২০১০ সালের শেষের দিকে জসিম নাম পরির্বতন করে নাম রাখা হয় প্রদীপ। মৌলভীবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেখিয়ে নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোট তুলে হয়ে যায় পৌরসভার ভোটার। সেই ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি চাকরির আবেদন করলে তার চাকরি হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে। মৌলভীবাজার থেকে যোগদান করেন কুলাউড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। চাকরির এক বছর নিয়মিত মৌলভীবাজার থেকে যাতায়াত করলেও পরের বছর থেকে মাসে ১৫ দিনে একদিন কর্মক্ষেত্রে যান এবং ১৫ দিনের স্বাক্ষর এক দিনে করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন বলেন, প্রদীপের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে, সে আমাদের হুমকি ধামকি দেয় এবং বলে আমাদেরে মদ দিয়ে পুলিশের কাছে তুলে দিবে। তার সাথে পুলিশের শক্তি আছে।
প্রদীপের জম্মস্থান কুমিল্লার সুইপার কলোনীর হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজন বলেন, প্রদীপকে আমরা চিনি না। আপনি যে ছবি দেখিয়েছেন সে হলো জসিম। তার বাবার নাম রামরুপ ভাসপর মায়ের নাম লিলিয়া ভাসপর। তার নানা বাড়ি মৌলভীবাজার। এখন মৌলভীবাজারে প্রদীপ নাম কি ভাবে হলো সেটা প্রশাসন ভালো জানে। কুমিল্লায় তার বাড়ি। সে এখানে আসে, আমাদের সাথে কথা হয়। আমাদের হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সুদে টাকা লাগিয়েছে। এটা তার একটা ব্যবসা। তবে সে অল্প দিনে কোটি টাকার মালিক হয়েছে।
নোয়াখালী চৌমুহনী তার শশুরবাড়ি। সেখানেও তার সুদের এবং মাদকের ব্যবসা আছে। ব্যাংকে তার বউ এবং তার সন্তানের নামে টাকা রাখে। যাতে তাকে কোনদিন ধরলে তার একাউন্টে টাকা পাওয়া না যায়। তবে সে খুবই ভয়ংকর। আপনি এখানে আসছেন, আমাদের ছবি তুলেছেন, জসিমকে দেখাবেন না। তাকে দেখালে আমাদেরকে তুলে নিয়ে যাবে এবং মারধর করবে।
মৌলভীবাজারের হরিজন মুন্না ভাসপরের মৃত্যুর পর মুন্নার বসতঘর নিজের নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যায় জসিম ওরফে প্রদীপ। গঁড়ে তুলে জসিমের সাম্রাজ্য। বাসার ভিতরে টেবিল সাজিয়ে প্রতিদিন মদের ব্যবসা করে। যা প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। হরিজন সম্প্রদায়ের মানুষকে সুদে টাকা দিয়ে তার নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসে। এমন কি সুদের টাকা পরিশোধ করলেও অধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য তাদের উপর মামলা করে।
এ নিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ কথা বললে তাদেরকে হুমকি ধামকি দেয় জসিম। একাদিকবার প্রশাসনেন নজরে আসলেও তা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ফেলে বলে জানান এলাকার সাধারন মানুষ।
জসিমের বড় বোন পাইলিয়া ভাসপর মৌলভীবাজার পুরাতন হাসপাতালের ভিতরে কোয়ার্টারে থাকেন অবৈধ ভাবে। কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না এবং বোন পাইলিয়ার বাসায় নেশার বিভিন্ন জিনিস রাখে। যা প্রশাসনের নজরে আছে। কিন্তু জসিমের টাকার শক্তির কাছে অনেকে কাবু।
প্রায় তিন বছর আগে জসিমের পিসির ঘরের ভাই কানাইয়া ভাসপর জসিমের মাদক নিয়ে তার ঘরে ধরা খায়। সেই সময় তাকে জেল হাজতে নিয়ে গেলে কয়েকদিন পরে কানাইয়া জেল হাজতে মারা যায়।
এবিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমার্ন্ডার জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, মৌলভীবাজার পৌরসভার ভিতরে প্রাকাশ্যে মদ গাঁজা সহ নেশার জিনিস বিক্রি করে এটা নিয়ে কেউ কথা বলে না। জসিম একটা আবরর্জনা তাকে পুলিশে কেনো এখান থেকে সরায় না বুঝতে পারছিনা। এটা তো তার বাড়ি না। আর যার বাসায় থাকে সেই বাসাও তাদের না। এই জায়গা হলো সড়ক ও জনপথ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের। এটা নিয়ে আমরা মামলা করেছি। আদালত আমাদের পক্ষ রায় দিয়েছে। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধার পক্ষ থেকে বলছি এবং প্রশাসনকে অনুরোধ করছি আপনার এইখান থেকে জসিম নামের আবর্জনাকে পরিস্কার করেন।
এলাকার সামাজিক সচেতন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজা মিয়া বলেন, আমাদের এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে। এলাকার যুব সমাজ নষ্ট করছে। তাই জসিমকে এইখান থেকে সরাতে হবে। এই জন্য আমরা এলাকার সবার কাছ থেকে গণস্বাক্ষর নিচ্ছি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
৭নং চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার সাদেক আলী বলেন, স্কুলের পাশে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হচ্ছে, প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিৎ।
সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বলরাম নাথ বলেন, এব্যাপারে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এক সময় গণস্বাক্ষর করে জেলা প্রশাসকের নিকট দেওয়া হয়েছিল। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শিশু কানুন হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক মুহিবুর রহমান বলেন, এখানে মাদক বিক্রি ও সেবনের আখড়া গঁড়ে উঠেছে। দুর্গন্ধে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী সহ শিক্ষকরা বসতে পারেননা। এছাড়াও মাদক সেবী ও ক্রেতার আনাগোনায় পরিবেশ খুব খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ এ,কে,এ,এম, নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। অচিরেই অভিযান চালানো হবে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব মোঃ ফজলুর রহমান বলেন, মাদকের বিষয় আমরা জিরো ট্রলারেন্সে আছি। আমার পৌরসভার ভিতরে এসব কাজ চলবেনা। প্রশাসনকে নিয়ে অভিযান করা হবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মাহমুদুল হাসান বলেন, এবিষয়ে আমাদের জানা নেই। আপনি যখন আমাদের জানিয়েছে, আমরা বিষয়টি যাচাই বাচাই করে আইনি ব্যবস্থা নেবো।