নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ সজিব বলেন, কিশোর’ একটি চমৎকার শব্দ। রবীন্দ্রনাথের ‘ছুটি’ গল্পে ফটিকও ছিল কিশোর। কিশোর শব্দের সাথে ‘আলো’ মানে “কিশোর আলো”, অথবা ‘কুমার’ মানে ” কিশোর কুমার” বা ‘বাতায়ন’ মানে “কিশোর বাতায়ন” কিংবা “গঞ্জ” মানে “কিশোরগঞ্জ” এগুলোই বেশি মানানসই এবং আমরা এসব শব্দই শুনে আসছি। কিন্তু ইদানীং ‘কিশোর’ শব্দের সাথে ‘গ্যাং’ যুক্ত হয়ে তৈরি করেছে “কিশোর গ্যাং” যা খুবই আপত্তিকর।
অল্প বয়সী কিছু ছেলে জোটবদ্ধ হয়ে বিশৃঙ্খল কাজ কর্ম করে বেড়াচ্ছে বা করার চেষ্টা করছে। এরা আবার ছিনতাই, চুরি, মাদকের সাথে জড়িত। ফলে এক অন্ধকার জীবনের দিকে এগিয়ে যেতে চায় যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। জীবন কী বোঝার আগেই দু’একটি মামলায় আসামি হয়ে যাচ্ছে কেউ কেউ। অথচ তাদের হওয়ার কথা ছিল দু’একটি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান। কেন তারা এ পথে চলে যাচ্ছে বা জড়িয়ে পড়ছে সেটার কারণ খুঁজে বের করতে হবে। কারণগুলোতে জোর দিতে পারলে এটি আর বাড়বে না বা বন্ধ হয়ে যাবে। সবার আগে কিশোরদের বাবা মাকে দায়িত্ব নিতে হবে। কিশোর সন্তান কোথায় যায়, কী করে, কার সাথে মিশে, কেন মিশে এসব তদারকি করতে হবে। তার প্রতিটি সময়ের হিসাব চাইতে হবে। রাতে বাইরে অবস্থান করতে দেয়া যাবে না। স্কুল কলেজের শিক্ষকগনও শক্ত হতে হবে যাতে তার কোন শিক্ষার্থী বিপথগামী না হয়। প্রত্যহ সমাবেশে এসব বিষয়ে বক্তব্য দিতে হবে। স্থানীয় রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতৃবৃন্দকে সদা সজাগ থাকতে হবে। কোন পাড়া, এলাকা, মহল্লায় যেন এরা বাড়তে না পারে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, পুলিশ, প্রশাসন সকলকে সদা জাগ্রত থাকতে হবে। অপরাধ করে বসলে আর কোন ছাড় নয়। পাড়া মহল্লায় নানাবিধ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে হবে। যাতে তারা বাজে কাজে যেতে না পারে। এক্ষেত্রে সমাজের ধনাঢ্য অংশ সহযোগিতা করতে পারেন।
পড়াশোনা বা কোন কর্মের বাইরে রাখা যাবে না এসব কিশোরদের। পড়াশোনা না করলে অতি দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশ পাঠানো যেতে পারে। ঢাকায় কর্মে নিয়োজিত করা যেতে পারে। নানা প্রশিক্ষণে ব্যস্ত রাখা যায়।
সাংবাদিক সমাজকেও তৎপর হতে হবে৷ কোন এলাকায় এমন বয়সীদের উৎপাত শুরু হলে কলম ধরতে হবে। তাদের অপকর্ম তুলে ধরতে হবে যাতে তা অংকুরেই বিনাশ করা যায়। ফেসবুক, ইউটিউবে তারা যেন কোন অনলাইন কার্যক্রম করতে না পারে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকা দরকার। তাদের ফেসবুকও নজরদারিতে রাখতে হবে। এই গ্যাংয়ের লোকজন মটর সাইকেল বেশি ব্যবহার করে। তাই মটর সাইকেলের ওপর নজর রাখতে হবে। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে ধরে ফেলতে হবে। অনেক সময় ব্যাগে ছুরি, চাপাতি বহন করে কেউ কেউ। কলেজ/স্কুলে ঢোকার সময় বা অন্যত্র ব্যাগ চেক করতে হবে। কেউ যাতে এসব জিনিস সহজে না পায় বা বহন করতে পারে সতর্ক হতে হবে। বিভিন্ন উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রায়ই নানাবিধ সভা, সমাবেশ, মিটিং, সিটিং হয়ে থাকে। সেখানেও কিশোর গ্যাং বিরোধী প্রচারণা চালানো যেতে পারে।
যদি কোন ব্যক্তি এসব গ্যাংকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তবে তাদেরকেও বয়কট করতে হবে। কারো কাছে কোন তথ্য থাকলে স্থানীয় প্রশাসন, থানা অথবা ৯৯৯ এ কল করে জানাতে হবে। সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে পারলেই তবে এসব কিশোর গ্যাংয়ের উচ্ছৃঙ্খলতা রুখে দেয়া যাবে এবং সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। তাই আসুন সবাই সবার দায়িত্বটুকু পালন করি। কিশোর গ্যাং নিয়ে আলোচনার সময় নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ সজিব এ কথা বলেন।